অহংকারের চাইতে দেশের উপকারে মমতাজের নিবেদন বেশি হবার কারণ আছে। মমতাজ মুর্শিদী গানের লোক, মাইজভান্ডারির দিওয়ানা; তাঁর বিচ্ছেদ গান দিয়ে কোটি কোটি মানুষ নিজেদের বিরহ উদযাপন করে। ফলে নিবেদন জানেন মমতাজ।
জাতির পিতা বা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে তিনি গাইলেন বলে মধ্যবিত্ত একে ‘অকারণ স্তুতি’ মনে করবে; কেননা, এরা তো ‘মুর্শিদ’ বোঝে না; তাই হাসিনা যে মমতাজের ‘মুর্শিদ’ হইতে পারেন, ‘বাবা মাইজভান্ডারি’ হতে পারেন– তাও বুঝবে না।
এই মধ্যবিত্ত আরো বুদ্ধিমান হইলে মমতাজের জ্ঞানকে সমীহ করতো। বিনা শর্তে যখন নিবেদন করতে হয়, সওয়াল-জবাবের উপরে থাকেন যিনি– তিনিই মুর্শিদ, বাবা মাইজভান্ডারি। জ্ঞানের সেই নিগূঢ় মরমে যিনি যাইতে পারছেন, তাঁর মাঝেই পয়দা হবে নির্ভয়-নিটোল ভক্তি। তখন মুর্শিদের চরণে জায়গা না পাইলে অস্থির হয়ে যায় ভক্ত। নিবেদন ছাড়া গতি নাই ভক্তের, নাই মুক্তির রাস্তা। আর সত্যিকার দিওয়ানা সহজেই চিনে নেয় তাঁর মুর্শিদকে। মধ্যবিত্ত সেই দিওয়ানা নয়, ফলে মুর্শিদ চেনে না। রাজনীতির যেই নিঃসীম মহাগগণে আছেন শেখ হাসিনা তা বুঝবে না মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্তের নাই মুর্শিদ চেনার সেই চিকণ চোখ।
মমতাজ তাঁর সহজ মরমে আলগোছে বুঝে ফেলছেন– সওয়াল করা যায় না হাসিনাকে; এই শর্তাতীত অস্তিত্ব মুর্শিদ বিনা কার আছে? তবু ভক্তের ভয় আছে, মুর্শিদকে হারিয়ে ফেলবার ভয়; মুর্শিদের মর্জি বোঝা ভার; এই আছে, এই নাই। ও চরণ হারাবার ভয় তাই ছিলো মমতাজের গানেও। চিরদিন হাসিনা থাকবে না—সেই আশংকা বলেও কেউ কেউ শুনতে পারেন সেই গান।
২০ জুন ২০১৪